এই গরমে আপনার স্কিন ও কি রয়েছে চরমে?
বাংলাদেশের গরম কেবল তাপমাত্রার নাম নয়, আমাদের ত্বকের জন্য এটা একটা পুরো চ্যালেঞ্জিং সময়। একদিকে প্রচণ্ড রোদ, অন্যদিকে গায়ে লেগে থাকা ঘাম, আর বাতাসে উড়তে থাকা ধুলাবালি। এই সব কিছুর সাথেই আমাদের ত্বক প্রতিদিন লড়াই করে।
আমরা অনেকেই নিজেদের স্কিনকে এই গরমের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করি, কিন্তু চেষ্টা করতে গিয়ে কিছু ছোট ছোট ভুল করে ফেলি, যেগুলো স্কিনের আরো বেশি ক্ষতি করে। একজন গবেষক হিসেবে আমি প্রতিদিনই এই ভুলগুলোর প্রভাব চোখের সামনে দেখি, বিশেষ করে শহরে।
চলুন, জেনে নেই গরমে ত্বকের যত্নে যেই ৩ টি ভুল করা যাবে নাঃ
ভুল ১: “ঘন ঘন মুখ ধুয়ে নিলে স্কিন পরিষ্কার থাকে”- কথা কি সত্যি?
গরমে মুখ বারবার তেলতেলে হয়ে যায় বলে অনেকে দিনে তিন-চারবার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলেন। কেউ কেউ তো স্ক্রাব দিয়ে স্কিন এমনভাবে ঘষাঘষি করেন, যেন সব তেল একেবারে ধুয়ে মুছে ফেলতেই হবে। ফলাফল, ত্বক ভালো হওয়ার জায়গায় উল্টো ত্বক তার প্রাকৃতিক তেল হারিয়ে ফেলে। অনেকেই জানে না যে, এটি আসলে ত্বকের রক্ষা-কবচ। স্কিন নিজেকে রক্ষা করতে আরও বেশি তেল তৈরি করে, আর সেই অতিরিক্ত তেল থেকেই শুরু হয় ব্রণ, র্যাশ, বা স্কিন ইনফেকশন। তার ওপর অতিরিক্ত ক্লিনজিং ত্বকের ভেতরের গুরুত্তপূর্ণ মাইক্রোবায়োমকে নষ্ট করে দেয়, যা স্কিনকে প্রাকৃতিকভাবে ব্যাকটেরিয়া ও অ্যালার্জি থেকে রক্ষা করে থাকেজায়
গবেষকের পরামর্শ অনুযায়ী:
- দিনে দুইবার, হালকা ধরণের বা মাইল্ড (সালফেট-মুক্ত) ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন।
- ঘাম হলে শুধু পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
- মুখ মুছতে তোয়ালে দিয়ে হালকা ট্যাপ করে শুকিয়ে নিন।
ভুল ২: “বাসায় থাকলে সানস্ক্রিন লাগানোর দরকার নেই”- এই ভুলেই কি হয় ত্বকের ক্ষতি?
আমরা সবাই যখন ঘরে থাকি তখন মনে করি, সানস্ক্রিন তো বাইরে বের হলে লাগাতে হয়। ঘরের মধ্যে তো আর সূর্যের আলো আমার ত্বকের ক্ষতি করছে নাহ। কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। গরমে ত্বকের যত্নে যেই ৩ টি ভুল করা যাবে না তার মধ্যে এটি অন্যতম।
কারন সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি (UV-A) কাঁচ ভেদ করেও আপনার স্কিনে আঘাত করে। এটা ধীরে ধীরে ত্বকের রঙ পরিবর্তন করে, বয়সের দাগ ফেলে, এমনকি কালো দাগ ও ছোপ ছোপ দাগের জন্ম দেয়। আর ঘরের বাল্বের আলো, মোবাইল স্ক্রিন, ল্যাপটপের নীল আলো (blue light), রান্নাঘরের চুলার তাপ এইসব কিছুই আপনার স্কিনে প্রভাব ফেলে ত্বকের পিগমেন্টেশন বাড়িয়ে দেয়। যার ফলাফল হিসেবে দেখা দেয় হাইপারপিগমেন্টেশন।
গবেষকের পরামর্শ অনুযায়ী:
- প্রতিদিন সকালে ঘরে বা বাইরে বের হওয়ার আগে একবার SPF ৩০+++ বা ৫০+++ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। বাইরে বের হলে প্রতি ২-৩ ঘন্টা পর পর পুনরায় ব্যবহার করা করুন।
- বাইরে গেলে যেমন সানস্ক্রিনের সাথে হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার প্রয়োজন ঠিক তেমনি ঘরের ভিতরে এসি বা ফ্যানের নিচে থাকলেও, সানস্ক্রিনের সাথে হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো। যা আপনার ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করবে।
ভুল ৩: “ড্রাই স্কিন! তাই ভারী ক্রিম লাগাতেই হবে”- মিথ নাকি মিথ্যা?
ড্রাই স্কিনের জন্য অনেকেই ভারী বা ঘন ক্রিম ব্যবহার করেন। অনেকে আবার রাতের বেলা ভারী নাইট ক্রিম ব্যবহার করেন। গরমকালে এই অভ্যাসটি মারাত্মক হতে পারে। ভারী ক্রিম স্কিনের উপর একটা মোটা স্তর তৈরি করে, যার কারণে ত্বকে ঘাম আটকে যায়। ঘাম বের হতে পারে না, ফলে ত্বকে তেল জমে গিয়ে র্যাশ, চুলকানি বা ব্রন দেখা দেয়। বিশেষ করে যাদের ত্বক কম্বিনেশন বা তৈলাক্ত ধরণের, তাদের জন্য এটা আরও ঝুঁকিপূর্ণ।
গবেষকের পরামর্শ অনুযায়ী:
- এই গরমে ব্যবহার করুন হালকা জেল বা পানি বেসযুক্ত ময়েশ্চারাইজার।
- যে উপাদানগুলো আদর্শ: অ্যালোভেরা, টি-ট্রি ওয়েল, গ্লিসারিন, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, নিয়াসিনামাইড ইত্যাদি। তবে স্কিন টাইপ বুঝে প্রোডাক্ট ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- যে কোন ত্বকেই “লেয়ারিং” করুন, অর্থাৎ, প্রথমে সিরাম, তারপর জেল টাইপ ময়েশ্চারাইজার, এরপরে ত্বকে ভালভাবে প্রোডাক্ট শোষনের পর সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
অতিরিক্ত টিপ: ত্বককে রাখুন ঠাণ্ডা
গরমে ত্বকের যত্নে যেই ভুলগুলো হচ্ছে সেগুলো থেকে বাঁচতে দিনে এক-দুবার রোজ ওয়াটার বা মিস্ট স্প্রে করলে ত্বক একদম ফ্রেশ অনুভব করে। চাইলে এগুলো রেফ্রিজারেটরে রেখে ঠাণ্ডা করে নিয়ে ব্যবহার করুন, তাৎক্ষণিক আরাম পাবেন। এছাড়াও চাইলে ত্বকে বরফ ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু সরাসরি ত্বকে বরফ নাহ ঘষে পানিতে বরফ মিক্স করে সেই পানিতে মুখ ভিজিয়ে রাখলেও আপনার ত্বক সস্তি পেতে পারে এই কাঠফাটা গরমে।
শেষ কথা
স্কিন কেয়ার মানে শুধু ত্বকের যত্ন নেওয়া না, বরং ত্বকের অবস্থা বুঝে শুনে যত্ন নেওয়া আবহাওয়ার সাথে স্কিন রুটিন অ্যাডজাস্ট না করলে, প্রোডাক্ট যত দামিই হোক নাহ কেন, ফলাফল হবে ক্ষতিকর। একজন গবেষক হিসেবে আমি সবসময় বলি - “কম প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন, কিন্তু সঠিক জিনিস ঠিক উপায়ে ব্যবহার করুন।” আপনার স্কিনের দরকার সঠিক জিনিস সঠিক পরিমাণে। আর গরমে সেই ‘সঠিক জিনিসগুলো চেনা ও ভুলগুলো এড়িয়ে চলাই হচ্ছে প্রকৃত স্কিন কেয়ার।