যে কোনো বয়সেই আয়নায় তাকিয়ে সর্বপ্রথম কি চোখে পরে?
চোখের নিচে হালকা কালি, কিছু দাগ বা ব্রন, কোথাও বয়সের ছাপ, আবার কখনো স্কিন একেবারে ফ্রেশ। কিন্তু কেন এমন হয়? আমরা কি এর রহস্য বুঝতে পারি? নাকি মনে হয়- বয়স তো কম, কিসের টেনশন? অথবা কারো মনে হয়- এখন আর কিছুই করার নেই, সময় শেষ! কিন্তু এই ভাবনাগুলোই আমাদের স্কিনকেয়ারের সবচেয়ে বড় শত্রু। আমরা অনেকেই এখনো জানি নাহ যে আমাদের বয়স অনুযায়ী স্কিন কেয়ার কেমন হওয়া উচিত।
আমাদের দেশে, যেখানে চারপাশে ধুলোবালি, তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালে ২৫-৩০ ডিগ্রির উপরে থাকে, হিউমিডিটি ৭০% এর বেশি, আর দিনের বেশিরভাগ সময় বাইরের রোদে-ঘামে-ধুলোয় থাকতে হয়, সেখানে বয়স অনুযায়ী স্কিন কেয়ার করা, ঠিক নিশ্বাস নেওয়ার মতোই জরুরি।
চলুন, আজকে আমরা বয়স অনুযায়ী স্কিনের চাহিদা, ভুল ধারণা, আর সঠিক যত্নের নিয়ম নিয়ে একটু আলোচনা করি।
২০-এর ত্বক: "আমি তো এখনো অনেক ইয়াং, স্কিনের যত্ন নেয়ার সময় এখনো হয় নি।"
২০ বা এর আসেপাশের বয়স মানেই ফ্রেশ, ইয়ুথফুল স্কিন, কিন্তু তোমরা কি জানো মূলত স্কিনের ক্ষতি শুরু হয় এই বয়স থেকেই। আমাদের দেশের মেয়েরা স্কুল, কলেজ বা ইউনিভার্সিটি যাওয়ার জন্য় সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন মাখে না, মনে করে "সানস্ক্রিন তো পিকনিকে বা কোথাও ঘুরতে গেলে বা মাঝে মধ্যে লাগে!" এই কথাটা একটা বড় মিথ যেটা ভাঙা প্রয়োজন! কারণ সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি, ধুলোবালি, হরমোনাল পরিবর্তন সবকিছু মিলিয়ে স্কিনের ভিতর ক্ষতি হতে থাকে।
আর ২০-এর একটা সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ব্রণ বা পিম্পল! যা হরমোনের পরিবরতনের কারণে ত্বক বেশি তেলতেলে করে তোলে, পোরসগুলো বড় হয়। রেজাল্ট, ত্বকে ব্রণ বা পিম্পল। বয়স অনুযায়ী স্কিন কেয়ার নাহ করেই তখন শুরু হয় সব হোম রেমেডিস টিপস, ইউটিউব হ্যাকস, বা স্কিন কেয়ারের প্রোডাক্ট একের পর এক পাল্টানো- যেটার কারনে স্কিনের ক্ষতি হয়ে থাকে।
২০-এর স্কিনের সঠিক রুটিন কী?
- হালকা ফেসওয়াশ - যেটা ত্বককে শুকিয়ে ফেলবে না
- লাইট ময়েশ্চারাইজার
- প্রতিদিন সানস্ক্রিন (এসপিএফ ৩০+++/৫০+++)
- কিছু ন্যাচারাল উপাদানের প্রোডাক্ট চাইলে শুরু করা যায়, কিন্তু ধীরে ধীরে
- মাসে একটা ফেসিয়াল, যা স্কিনের ময়লা দূর করতে সাহায্য করবে।
মাইন্ডসেট: ২০-এর ত্বক মানে কেয়ারলেস থাকা নয়, বরং স্কিনকে আগামী ১০ বছরের জন্য প্রিপেয়ার করা। এক্ষেত্রে, আপনারা ওয়েলেসিয়ার Chlorophyll Facial- টি ব্যবহার করতে পারেন।
৩০-এর ত্বক: "ত্রিশের পর নতুন আর কি শুরু করব বা আর কত ক্ষতি করব?"
ত্রিশ মানে জীবনের রিয়েলিটি চেক! এই বয়সে এসে আমরা অনেকেই দেখি- কেন যেন চেহারায় নেই সেই আগের মতোন উজ্জ্বলতা। হালকা ফাইন লাইনস শুরু হয়েছে, আগে যা কখনোই ছিল না! স্কিন একটু শুষ্ক শুষ্ক আর মলিন লাগে। ত্রিশে আমাদের ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিসিটি ধীরে ধীরে কমতে থাকে, পিগমেন্টেশন দেখা দেয়। আমাদের দেশে এই বয়সের মেয়েরা কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যবহারে ভয় পায়। যেহেতু কখন কোন স্কিন কেয়ার করবে বা প্রোডাক্ট ব্যবহার করবে তা অনেকেই জানে নাহ, তাই কিছু কেমিক্যালও যে স্কিনের জন্য ভালো এটাও অনেকেই জানে নাহ।
“রেটিনল নিয়ে একরকম ভয়ে অনেকেই থাকে।” অনেকেই মনে করে রেটিনল দিলে স্কিন পাতলা হয়ে যাবে, বার্ন করবে, কারন এটি একটি কেমিক্যাল। কিন্তু আসলে সঠিক নিয়ম মেনে ব্যবহার শুরু করলে রেটিনল স্কিনের বেস্ট ফ্রেন্ড হতে পারে। এছাড়া যারা কেমিক্যাল ফ্রি এবং ন্যাচারাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে চান তারা তাদের স্কিন টাইপ বা সমস্যা অনুযায়ী প্রোডাক্ট পেয়ে যাবেন Wellessia- তে।
৩০-এর স্কিনের রুটিন কী হওয়া উচিত?
- হাইড্রেটিং ফেসওয়াশ (স্কিন শুকনো হয়ে যাচ্ছে, তাই হাইড্রেশন দরকার)
- সাপ্তাহিক ফেসিয়াল
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সিরাম
- ময়েশ্চারাইজার
- প্রতিদিন সানস্ক্রিন (এসপিএফ ৫০+++)
- রেটিনল বেসড প্রোডাক্ট (০.২৫% বা ০.৫% ধীরে ধীরে শুরু করে ধাপে ধাপে বাড়ানো)
মাইন্ডসেট: ত্রিশ মানেই সব শেষ নয়। বরং স্কিনের ইনভেস্টমেন্ট টাইম। এখন স্কিনের সঠিক কেয়ার না করলে রিঙ্কলস আর ড্যামেজ দেখা দেবে। ফেসিয়াল, সিরাম এবং মইশ্চারাইজার হিসেবে আপনার Pure Glow Set ব্যবহার করতে পারেন।
৪০-এর ত্বক: "দেরি তো হয়েই গেছে, এখন কিছু করে আর কি হবে!"
৪০-এর ত্বক আমাদের বলে - "আমি তো অনেক দিন ধরে সিগন্যাল দিচ্ছিলাম! এই বয়সে স্কিন আরও সেনসিটিভ হয়, শুষ্কতা বাড়ে, ইলাস্টিসিটি কমে যায়, স্পষ্ট ফাইন লাইনস আর রিঙ্কলস আরো বেশি দেখা দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের অনেকের মধ্যে একটা কমন ভুল ধারণা হলো - "৪০-এর পর স্কিনের জন্য কিছু করা মানে কসমেটিক সার্জারি বা লেসার ট্রিট্মেন্ট করতে হবে! আসল কথা হলো বয়স অনুযায়ী স্কিন কেয়ার করলে ৪০-এর ত্বকও হেলদি আর গ্লোয়িং থাকতে পারে।
৪০-এর স্কিনের রুটিন:
-
ক্রিম বেসড হাইড্রেটিং ফেসওয়াশ
- নিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার (সেরামাইড, পেপটাইডস, ফ্যাটি অ্যাসিড, বা ন্যাচারাল ইনগ্রিডইয়েন্স)
- রেটিনল (০.৫%–১% ধীরে ধীরে)
- ফেস অয়েল বা সিরাম (রোজহিপ, স্কোয়ালেন সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট)
-
প্রতিদিন সানস্ক্রিন (এসপিএফ ৫০+++)
মাইন্ডসেট: ৪০ মানেই বুড়ি হয়ে যাওয়া নয়। ৪০ মানে সঠিক উপায়ে মেরামতের সময়। ব্যবহার করতে পারেন ওয়েলেসিয়ার সেট গুলো যা সকল বয়সের জন্যই উপযুক্ত। এই বয়সে ত্বকের যত্নের পাশাপাশি দরকার চুলেরও যত্ন। যে কোনো বয়সেই প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্টস, হাইড্রেশন, আর সুরক্ষা দিলে পরিবর্তন অবশ্যই আসবে। আর চুলের যত্নে বেছে নিতে পারেন ওয়েলেসিয়ার Hair Grow Set.
বাংলাদেশের স্কিনকেয়ার মিথ:
- “আমি ফর্সা, তাই স্কিনকেয়ার দরকার নেই!" এটা একটা মিথ। ফর্সা হলেও সূর্যের রশ্মি গায়ের রঙ ও স্কিনের ক্ষতি করতে পারে।
- কেমিক্যাল মানেই ক্ষতিকর! এই চিন্তা ধারনা ভুল, সঠিক ডোজ আর ফর্মুলা হলে কেমিক্যালও নিরাপদ আমাদের স্কিনের জন্য।
- ন্যাচারাল মানেই বেস্ট! এই কথায় ভুলো নাহ, কারন প্রকৃতির সব উপাদান স্কিনের জন্য উপকারী নয়, সঠিক রিসার্চ ছাড়া ন্যাচারাল উপাদানেও রেজাল্ট আসে না।
-
ফেসওয়াশ আর ক্রিম-ই যথেষ্ট! কিন্তু না, স্কিনকে প্রোটেকশন, হাইড্রেশন, রিনিউয়াল সব দিক থেকেই যত্ন করা দরকার।
শেষ কথা: আপনার স্কিন বদলালে, বদলে যাবে আপনার গল্প
বয়স অনুযায়ী স্কিনকেয়ার মানে "লাক্সারি" না, এটা আপনার স্কিনের প্রয়োজন। ২০- এ প্রোটেক্ট করুন, ৩০-এ প্রিভেন্ট করুন, ৪০-এ রিপেয়ার করুন। প্রতিদিনের যত্নেই আপনার স্কিনের ফিউচার লুকিয়ে আছে। তাই মিথে বিশ্বাস নাহ করে নিজের স্কিনের জন্য সঠিক প্রোডাক্ট বেছে নিন, আর আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রতিদিন শুরু করুন। যে কোনো বয়সেই আপনার স্কিন এবং হেয়ার হোক স্বাস্থ্যকর, উজ্জ্বল, এবং প্রানবন্ত।